Thursday, 12 June 2014

Daily Mail :: Oct 3 , 2013


আপনি কি কোন ঘিঞ্জি ব্যস্ত শহরের ডেলি প্যাসেঞ্জার? এই যেমন ধরুন রোজ সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে নাকে মুখে কিছু না গুজে ছুট লাগান লোকাল ট্রেন পাকড়াতে? যদি না হন তো বেঁচে গেলেন... আমি গ্যারেন্টি দিয়ে বলতে পারি আপনার মগজ এখনো ডেলি প্যাসেঞ্জারদের থেকে নব্বই শতাংশ তরতাজা আছে এর আগেও ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছি তবে সে সাহা ইন্সটিটুট নামক এক জায়গার AC বাসে চেপে বাসে উঠেই ঘুমিতে পড়তুম কাজেই কোন বেয়াদপী চিন্তা মাথায় আস্ত না এবারে লোকাল ট্রেনে যাতায়াতের আগে ওই একই রাস্তায় আমি রোজ আহরণ করেছি অটোয় চেপে সকাল আটটা দশে অটোয় চাপুন মিনিট পনেরো বসে থাকুন অটো ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায় তারপর আপনার যাত্রা শুরু প্রথম দশ মিনিট পাকা ঝকঝকে রাস্তা, আকাশ ছোঁয়া বাড়ি এবং মাল্টিপ্লেক্স দেখতে দেখতে কেটে যাবে এরপর অটো বাঁ দিকে ঘুরতেই মনে হবে আ হাইয়ে কাহা আ গ্যায়ে হাম এতো সবুজ এতো মায়া (কে জানে মমতাও হতে পারে) এমন রাস্তা তো এ শহরে অবিশ্বাস্য এমনকি একটু এগোতেই যে মেট্রো স্টেশনটা আছে সেটাও সবুজ দাঁড়ান দাঁড়ান কি মনে হচ্ছে এমন সুখের যদি যাত্রা হয় তো শুরুতে কাঁদুনি গাইলি কেন? ভুরু কুঁচকানোর আগে আমার সাথে এ যাত্রায় আর দশটা মিনিট সঙ্গ দিন
ওই যে একটু এগোতেই রাস্তার ধারে যেগুলোকে ছোট জলাশয় বলে ভুল করছেন সেগুলো হল গিয়ে বড় বড় গাড্ডা, অটোর চাকা ওতে পড়তেই বেশ কিছুটা কালো জল সাদা পাজামা টাকেদাগীকরে দিল, অগত্যা নিজেকে সান্ত্বনা আরেদাগ আচ্ছে হোতে হ্যায়’… এরপর? বেশ কিছুক্ষণ অটোটা যে পথে যাবে তাতে না চাইলেও সাইনুসয়ডাল গ্রাফে চড়ার মোক্ষম অভিজ্ঞতা হতে বাধ্য এটা ঠিক যেন অসম্ভব ভর নিয়েও ওয়েভ-পার্টিকেল ডুয়ালিটি হাতে নাতে ধরা পড়ার মতো ব্যাপার... এ জিনিস সাক্ষাৎ ভগবান দর্শন করার চেয়েও বেশিরকম আশ্চর্যজনক এই রকম ছোটো খাটো বাধাবিপত্তি কাটিয়ে অটো সোজ্জা ঢুকে পড়ল মাছের বাজারেটাটকা মাছ, পচা মাছ, শুকনো মাছ সব রকম গন্ধে গা যখন পাক দিচ্ছে তখনি এক সাইকেল আরোহীর সাথে রিক্সাওয়ালার টক্করে রাস্তায় অযাচিত জ্যাম, কাজেই অটো থেকে নেমে খুচরো দিতে না পারায় চালকের ধমকি খেয়ে কোনোমতে নিজেকে সামলে সুমলে হাঁটছি ওমনি কানের কাছে কেউ একটা গেয়ে উঠলো- “চিপকালে ইয়ারা ফেভিকল সে’... এখানেই শেষ নয় এরপর পঁচিশটাকার রিক্সার পথ তো এখনো বাকি সে গাজন আর ঘটা করে টাইপ করে হাত ব্যথা করে লাভ নেই আশা করা যায় আমি মোটামুটি আমার অটোয় যাতায়াত না করার স্বপক্ষে যথেষ্ট কারণ দেখিয়ে দিয়াছি... যদি তাও পুরপুরি আমার সাথে একমত হতে না পারেন তাহলে বলি ট্রেনের মান্থলির খরচ পঁচাশি টাকা আর যেতে সময় লাগে পাঁচ মিনিট !!! এরপর আর কি কোন যুক্তি খাটে? কাজেই সহযাত্রীর মাথার পরজীবী কে উপেক্ষা করে, জেনারেলে মাছওয়ালা-সবজিওয়ালার অনধিকার প্রবেশ মেনে নিয়ে ট্রেন আমাকে ধরতেই হবে আচ্ছা ভাড়ার সাথে যাতায়াতের সময়ের সম্পর্কটা সবক্ষেত্রেই ব্যস্তানুপাতিক হলে কত ভালো হতো না? উড়োজাহাজেও বেশ সুন্দর ভিড় করে একে অন্যকে ধাক্কা দিতে দিতে যখন তখন দূরদূরান্তে চলে যাওয়া যেতহুম!!!

মোটের ওপর আমার জীবন এখন সকাল থেকে কতগুলো সংখ্যায় দিয়ে নির্ধারিত- :১৫প্রথম অ্যালার্ম বন্ধ, :৩০- দ্বিতীয় অ্যালার্ম বন্ধ, তারও ১০ মিনিট বাদে ঘুম থেকে ধড়মড়িয়ে ওঠা :২৫ বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিক্সা করে স্টেশন :৪০ এর ট্রেন, নেমে আমার সর্ব্বোচ্চ গতিতে ছুটে দোতলা-একতলা-আবার দোতলার সিঁড়ি ভেঙ্গে রাস্তা পেরিয়ে ৮:৪৭ থেকে ৮:৫৩ কর্মস্থলে যাওয়ারও সুমোগাড়ির জন্য অপেক্ষাতারপর গাড়ি চেপে ওই বোকা-বাড়িতে (পড়ুন কলেজ) পৌঁছতেই আবার সব্বাই মিলে ম্যারাথন, কে কার আগে যেতে পারে ছাপ মারার ঘরেএইত্তো আজ কে আমি সুব্রত বাবুর আগেনা না এই মেশিনে ছাপ দিলে চলবে না ওই যে পাশেরটা দুমিনিট স্লো আছে যেএইইইই  :০২ - ছাপ কমপ্লিট যাক বাবা আজকের মতো নিশ্চিত আবার ছাপ দেবো ৪:০২ মানে মোটামুটি ৪:২০-র লোকালটা কনফার্ম ওফ...  সক্কাল সক্কাল এতো হিসেব নিকেশ মাথার ওপর চাপ পড়ে কিনা? তারপর আবার IT কে আজ uncertainty principle পড়াতে হবে, এ হপ্তার পাঁচনম্বর ‘uncertainty principle’ এর ক্লাস- মুখের কথা?                                     
এতো সবে শুরুর কাহিনী- আমার এই অসম্ভব আমিময় জীবনের বাকি কাঁদুনি পরে আবার গাইবো, ঘড়ির কাটায় আবার রাত ১:২২ টিকটিক করছে আর মনের মধ্যে সকাল ৭:৩০ ভয় দেখাচ্ছে ওফ এতো দুশ্চিন্তা বল্লুম যে আমার জীবনটা ভারি কঠিন নাহ্আজ আর চাপ নিতে পারছি নাএবার ঝাঁপ ফেলতেই হবে

1 comment: