Thursday, 2 August 2012

সীতায়ন




যে কথাগুলো এই মুহূর্তে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা নিয়ে জনসমক্ষে কোনদিন কিছু বলবনা বলেই ভেবেছিলাম। কিন্তু নাহ্‌, আর চাপতে পারলামনা। কারণ সকালবেলায় আমার দিদির মেয়ে ফোনে জিঙ্গাসা করে বসলো -আচ্ছা আমি ছেলে না মেয়ে?” তারপর পাল্টা প্রশ্ন

– “ছেলেরা ভালো না মেয়েরা?” ওর বয়স মাত্র চার বছর। প্রশ্নগুলো শুনে প্রথমে হতবাক হয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে এরকম প্রশ্নের কারণ জিজ্ঞাসা করায় জানতে
পারলাম ও এখন cartoon – এ মেতে রয়েছে। নিয়ম করে Superman , Spiderman  দেখছে আর হাঁদা-ভোঁদা , নন্টে-ফন্টের গল্প শুনছে। বুঝতে পারলাম ওর শিশুমনে এই সরল (আসলে জটিল) প্রশ্নগুলো আসার কারণ। একটু মাথা খাটিয়ে ওকে বললাম –“বাবুpower puff girls দেখো ”। আরো বললাম – “দুষ্টুমি না করলে আমরা সবাই ভাল”। না না, cartoon channel বা comics writer দের ওপর আমার ব্যক্তিগত কোন রাগ নেই। আসলে বাচ্চারা আজকাল এতো sensible হয়ে গেছে, যে আমাদেরও মনে হয় sense -টা একটুখানি বাড়ানোর সময় এসেছে। আসলে ওর প্রশ্নগুলো অনেক চেষ্টাতেও মাথা থেকে সরাতে পারছি না।
ছোটবেলা থেকে আমাদের পরিবারে ছেলে-মেয়ে সবাই কে সমান ভাবে বড় হতে দেখেছি। তাই তখন জগৎ সম্পর্কে ধারনা ছিল অন্যরকম। কিন্তু যত বড় হয়েছি , আমার জগতের পরিধি বেড়েছে আর বুঝতে শিখেছি আসলে সমাজের ছবিটা আলাদা, অন্তত আমি যা দেখে এসেছি তার চেয়ে ঢের আলাদা। আজকাল খবরের কাগজে পণের দায়ে বধূ নির্যাতন’ , ‘ভ্রূণ হত্যাএসব খবর দেখলে ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাই কারণ জানি শুধুই ঘরে বসে ফুঁসবো যেটা অর্থহীন। একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল এগুলো অশিক্ষিতের কাজ, লেখাপড়া শিখে আবার মানুষ এসব করে নাকি! ধারণাটা সহজেই ভেঙে গেলো যেদিন আমার পাড়ার এক মহিলাকে গায়ে আগুন দিয়ে তাঁর শ্রদ্ধেয় husband  আর শাশুড়ি মেরে ফেলল। সত্যিটা চাপতে এতটুকু খাটতে হল না - পরিবারের সকলেই যে আইনজীবী।
বন্ধুদের কাছ থেকে মাঝেমধ্যে শুনি multinational company – তে চাকুরীরত বাবা মেয়ের বিয়ের জন্যে প্রতিমাসের salary থেকে টাকা বাঁচিয়ে গয়না কেনেন কারণ নাকি ভারি পণ = ভালো শিক্ষিত(?) পাত্র। আমার স্মৃতি যা বলছে ভারতে পণপ্রথা ১৯৬১ সালেই আইনত নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য আইনে তো অনেক কিছুই বারণ থাকে (অনেক বারণের মানে যদিও আমি নিজেই বুঝি না)। তাতে তো সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণও নিষিদ্ধ। কিন্তু ২০১১-তে ভারতের

ছবির উৎস: লিঙ্ক

sex ratio কত? প্রতি ১০০০ ছেলে পিছু ৯১৪ জন মেয়ে (০-৬ বছর পর্যন্ত)। বাকি মেয়ে সন্তানেরা গেল কোথায়? প্রশ্ন করাটা কি খুব অযৌক্তিক হবে? এসব ঝুঁকি সামলে যদি একজন মেয়ে সন্তান জন্ম নিয়ে নেয় এবং বিবাহ পরবর্তী জীবনে টিকেও যায়, তখন দেখা যায় আসল মজা। সংসারের অবশিষ্ট মান সম্মান রক্ষার দায় তখন সেই বৌমানামক প্রাণীটির। তাইতো তার জীবিকা (যদি তা করার permission পায় তবে) থেকে পোশাক সবই decide করে দেয় অন্য কেউ। এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে? স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার তো সবার আছে বলেই জানতাম। তবে কেন বাপু আমি আমার নিজের ভালো লাগার কাজ ছেড়ে তোমার কথা মত job option সিলেক্ট করবো। Priority পাওয়াটা তোমার অভ্যাস হয়ে গেছে বলে আমার স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার তুমি ছিনিয়ে নিতে পারোনা, রাতের বেলায় তুমি রাস্তায় ছুটে বেড়াবে আর আমি বেরোলেই আমাকে insecure বোধ করতে হবে, কেন?
ছবির উৎস: লিঙ্ক

জানি এই কথাগুলো সবই আপনাদের জানা... তাই ভাবছেন হয়তো এসব ভেবে লাভ কি? হ্যাঁ, লাভ লোকসানের অঙ্ক কষলে ফল শূন্যই বেরবে। আর সমাজের বাকি সমস্যাগুলোর মতো এটাকে অভ্যেস করে নিলে এই জীবনটা কাটিয়েও দিতে পারবো। কিন্তু মুশকিল হল সমস্যাগুলোকে কি করে অভ্যেস বানিয়ে ফেলতে হয় আমি জানি না। তাই গলার আওয়াজটা সবক্ষেত্রেই বাড়িয়ে ফেলি। আর এই issue-তে আমি ও আমার মতো কিছু মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠলেই আর একদল মানুষ feminist বলে গালাগাল দেয়। সত্যি কথা বলতে কি কোন  ‘ism’-এ আমি বিশ্বাস করিনা। নারী- দিবসের প্রতিও আমি biased নই (কারণ তা দিয়ে আখেরে কিছুই হয়না)। আমি শুধু এটুকু বুঝি- নিজে বাঁচো আর বাকিদেরও তাঁর যোগ্য সম্মানটুকু নিয়ে বাঁচতে দাও। একটা মানুষের gender তাঁর চলার পথে বাধা হতে পারেনা।
মেয়ে হয়েছি বলে জীবনে কোনরকম compromise করবো না, সে সিদ্ধান্ত আমি অনেকদিন আগেই নিয়ে নিয়েছি। ভাবনা শুধু একটাই, আমার পরবর্তী প্রজন্ম কি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সমাজটাকে অন্যভাবে পাবে নাকি তাকেও আমার মতো নিজের কাছে promise করতে হবে আর থেকে থেকে অস্তিত্ব-সঙ্কটে ভুগতে হবে!

No comments:

Post a Comment