Thursday, 2 August 2012

আজ-কাল, আজকাল আমি



হঠাৎ করে বন্ধু মহলে কেমন একটা শোরগোল পড়ে গেল ব্লগে লিখতে হবে। এতদিন শুনে এসেছি কোনও এক নামীদামী সেলেব্রিটি নাকি ব্লগে কিসব(ছাইপাঁশ) কমেন্ট করে রাতারাতি সাড়া ফেলে দিয়েছে বেশ। ও বাবা! ব্লগে লিখেটিখে আমি আবার সেলেব্রিটি হয়ে যাব নাকি! ভাবতে কিন্তু মন্দ লাগছে না। অবশ্য ভাবতে অনেককিছুই ভালো লাগে, ভাবনাগুলোর জট পাকতেও বেশি সময় লাগে না। সময় লাগে সেই জটগুলোকে খুলতে। তারপর যদি সেটা নিয়ে লেখার কথা ভাবতে হয়...


ছোটবেলায় ডায়েরি লিখতে বেশ লাগত। লিখতামও অনেককিছু। ওগুলোকে আবার লেখা বলেও ভাবতাম।  সেগুলোকে অনেক যত্নে আমার আলমারিতে জামার মাঝে লুকিয়ে রাখতাম আর পাঁচজন যাতে না দেখে। কিন্তু এখন আর সেরকম মনে হয় না। বরং মনে হয় এই ভাবনাগুলোকে share করে যদি আরও কিছু কথায় কথা বাড়ে তো ক্ষতি কি?
খুব অল্পদিনের মধ্যে চারপাশটাকে যেভাবে বদলে যেতে দেখলাম সেটা আমাকে ভাবায়, রীতিমত ভাবায়। জানি না এই ভাবনাটা যেকোনো যুগে আমার বয়সী মানুষকেই ভাবায় কিনা! একদিন বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে উঠল ঝর্ণা কলমের কথা। যেটা দাদু বাবাকে দিয়েছিলেন। আজ আমরা use & throw  এর যুগে এরকম একটা পেনের কথা ভাবতেই পারিনা। শুধু পেন কেন, Big Bazaar-এ গেলেই চোখে পড়ে ড্রেস মেটিরিয়াল, ফার্নিচার আরও কত কিছুর ওপর exchange offerআর লাভ-লোকসানের কথা না ভেবে সেই জিনিস কেনার জন্যে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। তার ওপর আবার যদি buy one-get one free অফার পাওয়া যায়, তবে তো আর কথাই নেই। আমরা শ্যাম্পু থেকে শ্যাম্পেন যাই কিনতে হোক না কেন ছুটি

ছবি: সুনন্দ

Spencers-এ। এমনকি সিনেমাও শেষ কবে hall- এ দেখেছি মনে পড়েনা। এখন multiplex-এ সিনেমার টিকিটের সাথে পাওয়া যায় কম্বো food coupon, তাতে এক প্লেট ভেলপুরি পাওয়া যায় ষাট টাকা দিয়ে। মনে পড়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে বন্ধুরা পাঁচ টাকায় পেট পুরে ভেলপুরি-আলু কাবলি খেতাম। জানিনা একেই standard of living বেড়ে যাওয়া বলে নাকি এটাই living trend হয়ে যাচ্ছে!
লিখতে গিয়ে আরেকটা কথা মনে পড়ছে। আগে কখনো এটা নিয়ে আলাদা করে ভাবিনি। আমার বন্ধু অদিতির ফ্যামিলি যখন ট্রান্সফার হয়ে অন্য শহরে চলে গেল তখন বেশ কিছুদিন বাদে ওর চিঠি পেয়ে ভীষণ আনন্দ হয়েছিলো। ওর সঙ্গে যোগাযোগ কমে যাওয়ায় আফসোসও খানিকটা হয়েছিল তখন। কিন্তু আজ Orkut , Facebook আর বাজারে সদ্য লঞ্চ করা Google+ এর ঠেলায় মনে হয় বন্ধু হারানোর চাইতে বেশি ভয় হয় স্কুলের কিছু বিশেষবন্ধুর friend request accept করতে। এই প্রসঙ্গে আমার এক cousin –এর (বয়স ১৭) কথা না বললেই নয়। সদ্য প্রেম করছে। একদিন ল্যাপটপ খুলে দেখাল ওর বয়ফ্রেন্ডের Proposal mail আমি যবে প্রেম করেছি তখন পত্র’-concept প্রায় উঠে গেলেও প্রেমপত্রটা অন্তত চলতো। তাই মেলটা দেখে হাসির পাশাপাশি বয়স বেড়ে যাওয়ার অনুভূতিও হল।

Social network গুলোয় একটু খেয়াল করলেই নজরে আসে- বাজারে নতুন নতুন ব্র্যান্ডের সব চোখ ধাঁধানো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির electronic goods এর post গুলোতেই সবচেয়ে বেশি ‘like’ পড়েছে। আর দুপয়সা জমলে আমরা এখন সেগুলো কেনার কথাই ভাবি। যেগুলো আমাদের খুব বেশি হলে পাঁচবছর সঙ্গ দেবে। গত কয়েকবছরে আমরা যতগুলো মোবাইল ফোন কিনেছি সেটা ভাবলেই হিসেবটা অনেক সহজে বোঝা যায়। আমার ধারণা যদি মনোজ কুমার এই সময়ে সিনেমা বানাতেন তবে তার নাম দিতেন ‘Roti  Kapda  Mobile  Aur  Makan’এরমধ্যে একদিন মোবাইল বাড়িতে ফেলে কাজে চলে গেছিলাম। সারাদিন ফোনে লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে বেশ অস্বস্তি হয়েছিল। অথচ কয়েকবছর আগেও তো এটা আমার কাছে ছিলনা। কে জানে কাল হয়তো আমাদের কাছে এমন কিছু থাকবে যার কথা এখন শুধু science fiction –এই ভাবতে পারি। তাই মনে হয় যে কোন যুগে যত তফাৎ থাক না কেন একটা common বিষয় থাকবেই, সেটা হল পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের সাথে আমরাও হয়তো অজান্তে নিজেদের মিশিয়ে নিয়ে এগিয়ে চলি, খুঁজে পাই বেঁচে থাকার নতুন রসদ।

No comments:

Post a Comment