ছোটবেলায় পাড়ার কিছু বন্ধুদের সাথে সখ করে ‘রং’ খেলতে গিয়েছিলাম। একরাশ ছেলেমেয়ে ধেই ধেই করে যেই রং নিয়ে তেড়ে এসেছে ওমনি বাবারে মারে বলে কেঁদে ঘরে পলায়ন... তখন বয়স সাত। তারপর প্রায় উনিশ বছর বয়স অবধি রং খেলার দিন ঘরের বাইরে বের হইনি। যাদবপুর ইউনিভারসিটিতে সেকেন্ড
ইয়ারে পড়াকালীন আমার মেসে আমার বয়ফ্রেন্ড আর কিছু বন্ধুবান্ধব রং মাখাতে এসেছিল- প্রেমিকের হাতে লাল আবিরের প্যাকেট দেখে কেমন একটা আদিখ্যেতা করে তিনতলা থেকে একতলা এক নিঃশ্বাসে দৌড়ে নেমেছিলাম... কিন্তু হায়! নামতেই বাকি বন্ধুরা মাথায়, দাতে আরো কোথায় কোথায় রঙে ভরিয়ে দিল- আর সে বেচারা দূরে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থেকে লাজুক হেসে বিদায় নিল। কি আর করবে তথাকথিত ভদ্রছেলে। লাভের লাভ কি হল? মেসের মাসিমা ওপর থেকে গম্ভীর গলায় বললেন- “উঠোন ধুয়ে দিয়ে তবে ওপরে উঠবে”। তারপর বেশ কয়েকবছর কোন না কোন কারণে দোল খেলা হয়নি, তাই বিশেষ কোন স্মৃতি ও নেই। তবে হ্যাঁ, গত বছরের একটা বিশেষ অভিজ্ঞতার গপ্পো শোনাই- প্ল্যান হয়েছে দোলটা আমার বয়ফ্রেন্ডের (আগের জন নয়- এ নতুন, বেশ স্মার্ট) মেসে কাটাব। তাই সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে অটো করে হাজির হয়ে গেছি ওদের মেসে। মাংস-টাংস সব আগের দিন কিনে রাখা হয়েছে – এবার শুধু রাঁধো আর খাও... দশ জনের রান্না কাজেই আমরা আনাড়িরা ভালোই নাকানি চোবানি খাচ্ছি। পেঁয়াজ কাটতে কাটতে সৈকতের মাথায় এল – “দোলের দিন একটু ভাং খাবো না?” আমার শুনেই মনে হল এই তো একেই বলে- এক আইডিয়া যো বদল দে আপকি জিন্দেগি... দারুণ উৎসাহে মাংসের দায়িত্ব রিমার ঘাড়ে চাপিয়ে আমরা হাঁটতে হাঁটতে ৮-বি বাসস্ট্যান্ডে এলাম। রাস্তায় প্রচুর স্টুডেন্টদের ক্যাওড়ামো দেখে ভাবছিলাম –বাবা, ভাং খেলে এরকম করে লোকে?
যা হোক, গাদাখানেক ভাং এর কুলফি আর ভাং-এর গুলি –কিনে ফেরত আসছি –রাস্তাতেই সৈকত আর শুভ্র
দুটো করে কুলফি খেয়ে ফেলেছে – তারপর রোদে প্রায় কুড়ি-পঁচিশ মিনিট হেঁটেছে – ব্যস,
আর যাবে কোথায়? আমাকে প্রশ্ন করে বসলো –“হ্যাঁ রে, তুই ছেলে না মেয়ে?” কি উত্তর
দেবো ভাবছি, পরের প্রশ্ন –“তোর দাঁতে পোকা হয়?” বিন্দু বিন্দু ঘামছি- গরমে না নার্ভাস হয়ে
জানিনা। চাপ নিতে না পেরে একটা কুলফি আর একটা গুলি খেয়ে নিলাম... ভাগ্যি ভালো তার
কিছুক্ষণের মধ্যে মেসে ঢুকে পড়েছিলাম। শুভ্র বাড়ি ঢুকেই ধড়াম করে মাটিতে শুয়ে গড়াতে
শুরু করল... আর সে কি অট্টহাস্য! ইতিমধ্যে সৈকত শুভ্রর ভিডিও করার নামে চরম খোরাক
দিয়ে যাচ্ছে। দু’জনের আলোচনাটা এরকম – “এখন তোর পেছনটা ভারি না সামনেটা?” শুভ্র
সেদিন মুন ওয়াক থেকে ক্যাট ওয়াক সব-ই করে দেখিয়েছিল। আর সৈকত কেমন যেন সাহিত্যিক
সাহিত্যিক ভাব করে কাগজে কলমে কিছু একটা লিখে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল... আমি তখনো
সুস্থ। সবাইকে নেশার দ্রব্য বিতরণ করে নিজে আরো দুটো কুলপি খেয়ে মাংস ভাত খেতে
বসেছি- খাওয়া প্রায় শেষ। অতনু আমাকে কিছু একটা বলতে শুরু করেছে – ওর কথা গুলো আমার
কানে আসতে আসতে কেমন হারিয়ে গেল... মনে হল আমার আশপাশের জগতটাকে কেউ যেন ধরে
ঘুরিয়ে দিয়েছে আর আমি কোন neverland –এ বিচরণ
করছি, যেখানে শুধু হাসতে শেখানো হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম আমি প্রচণ্ড হাসছি, কিন্তু
থামা আমার সাধ্য নয়। এই করতে করতে হঠাৎ কখন যে সম্বিত ফিরল, নিজেই জানিনা। আমরা কয়েকজন একটা
ঘরে বসলাম আড্ডা দেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ সুখ দুঃখের কথা বলতে না বলতেই স্পষ্ট
বুঝলাম আমি আবার neverland –এর দিকে
যাচ্ছি-কিন্তু নিজেকে বিন্দুমাত্র আটকাতে ইচ্ছে করলো না। ছোট থেকে সাইনুসয়ডাল
কার্ভ পড়ে এসেছি- কিন্তু সেটা আসলে কিরকম হয় ভাং-এর নেশা না করলে বুঝতাম না।
বন্ধুদের মুখে পরে শুনেছি আমি একটা গল্প বলতে শুরু করেছিলাম- শুরু করেই ঝিম মেরে
চুপ করে যাই- খানিকবাদে হা হা করে হেসে ওদের জিজ্ঞেস করেছিলাম-“ কেমন লাগলো গল্পটা?”...ওরা
হতবাক! যাক, আমিও ওদের চুপ করাতে সফল হয়েছিলাম। আর যা যা করেছি তার কিছু মনে আছে-কিছু
মনে নেই – বাকি অনেক কিছুই এখানে লেখা যাবেনা। তবে এটা বলতে পারি যে নেশাই করুন না
কেন ভাং টা জীবনে একবার অন্তত খেয়ে দেখবেন – সে এক অনবদ্য অনুভূতি...
No comments:
Post a Comment