ছবির উৎস: লিঙ্ক |
দিনের শেষে বাড়ি ফিরে ব্যালকনিতে বসে চা খেতে খেতে রাস্তা দিয়ে যাওয়া নানা ধরণের মানুষগুলোকে observe করতে বেশ লাগে। সন্ধ্যে বেলা অন্তত আধঘণ্টা আমি এই অকাজটা করে সময় কাটাই। কিন্তু নাহ্, আজ সত্যি ভালো লাগছিলো না
বারান্দায় বসে থাকতে। বাড়ির সামনের দোকানটা বন্ধ, রাস্তায় আলো কম, সারাদিন প্যাচপ্যাচে বৃষ্টি। আর সবচেয়ে বড় কথা আজ বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে থাকা একদঙ্গল লোকের আলোচনা সত্যিই অসহনীয়। কি ঘটেছে?
আমাদের পাশের বাড়ির একটা
তেরো বছরের বাচ্চা suicide
করেছে। আর তাকে নিয়ে কেচ্ছা করতে মশগুল প্রায় গোটা পাড়া। এই আকস্মিক
মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করাটা ছিল আজ সন্ধ্যের তাদের অন্যতম কাজ। খারাপ আমারও
লাগছে। এতটুকু একটা বাচ্চা হঠাৎ এরকম কেন করলো- উত্তরটা কি সে ছাড়া আর কারোর
পক্ষে দেওয়া সম্ভব?
তাহলে কেন এতো আলোচনা?
ঠিক জীবনের কোন পর্যায়ে গেলে মানুষ এরকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে – আলোচনায়
মত্ত এই মানুষগুলো কি কখনো ভেবেছে? জানিনা। বিজ্ঞান মহলে আত্মহত্যা
নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে জানি। একসময় তা নিয়ে পড়াশুনাও করেছিলাম কিন্তু সেসব
থিয়োরি আজ সত্যি মাথায় আসছে না। Mental disorder-থেকে তৈরি depression-ই (আজকাল
অবশ্য depression ব্যাপারটাকে
অনেকে ‘গ্ল্যামার’-র চোখেও
দেখে) নাকি suicidal
tendency-র মূল কারণ। কিন্তু
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
কেন এই হতাশা? পরিবারে যে
মানুষটা আজ অবধি রোজগার করে এনেছে সে যদি কোনো কারণে কাল থেকে তার পরিবারের পেট চালাতে
সক্ষম না হয়- তাহলে ঠিক কি করতে ইচ্ছে করবে তার- ভেবে দেখেছেন কোনোদিন? জীবনে কোনো
একটা সম্পর্ককে বাকি সবকিছু থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আর হঠাৎ করে সেই
সম্পর্কটা বা সেই প্রিয় মানুষটা থাকল না...কি মনে হবে বলুনতো? সত্যি কথা
বলবো- আমার মনে হবে আমি আর কালকের দিনটা দেখতে চাইনা। ছোটবেলায় কোনো অন্যায় করে
নিজেকে লুকিয়ে রাখার স্মৃতি আছে? আমার আছে। কি মনে হয়েছিল তখন- যে ভীষণ দুষ্টুমি করেছি তাতে
নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না- সবার সামনে গেলেই বকা খাবো। তাহলে থাকিনা
আলাদা-একা কিছুক্ষণ। বড় হয়ে কখনো সেই দুষ্টুমির মাত্রা বেড়ে গিয়ে যদি বাকি
পাঁচজনের চোখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা হারিয়ে যায়। মনের মধ্যে একটা অসম্ভব চাপা
ব্যথা যদি দু’হাত
দিয়ে চেপে দমটা বন্ধ করে দেয়, তবে তার এই পরিণতিতে আপনি তাকে কি বলে ডাকবেন- পাগল না criminal? আর যাই হোক
না কেন, criminal কি
করে হবে, আমার
জানা নেই। কিন্তু সমাজে সেই crime-র বোঝা এমনই যে মরতে গিয়ে বিফল হওয়া কোনো মানুষের বেঁচে
থাকার বাকি ইচ্ছেটুকুও নষ্ট হয়ে যায়। বয়োজ্যেষ্ঠ অনেক মানুষকেই দেখেছি শারীরিক
অক্ষমতা আর পরিবারের অবহেলায় প্রতি মুহূর্তে নিজের মৃত্যু কামনা করছে, অথচ কষ্ট
সহ্য করে তাকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে, না শুধু পরিবারের কথা ভেবে নয়- আরো একধাপ উপরে ধর্মের কথা
ভেবে। ঈশ্বরের দেওয়া প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার একমাত্র নাকি ওঁর ই আছে। আবার
হাস্যকরভাবে হিন্দুধর্মে কোনো সৎ উদ্দেশ্যে আমরণ অনশন কে বরাবর বেশ মহান চোখে দেখা
হয়। ব্যাপারটার মধ্যে আমি একটা স্বার্থের গন্ধ পাই। একজন মানুষ সৎ উদ্দেশ্যে তাঁর
প্রাণ দিচ্ছে আর সেই ফল বাকি সবাই ভোগ করছে... বাহ্! দারুণ ব্যাপার। দাও সেই
ক্ষুদিরামকে বার খাইয়ে। কিন্তু একজন মানুষ যখন জীবনে পরিশ্রান্ত হয়ে (নাহয়
সকলের মনরক্ষার্থে বললাম psycho
হয়ে) ছুটি চাইছে তখন তাকে ধর্মের ভয় দেখানোর আমরা কে?
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
কি জানি আজ আমি খুব বেশি
ক্লান্ত কিনা! চারপাশটা বেশিই অন্ধকার লাগছে...ভাবনা চিন্তা সব এলোমেলো হয়ে
বাচ্চাটাকে আবার স্কুলে যেতে দেখতে ইচ্ছা করছে- ওকে খেলার মাঠে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে
মন চাইছে। আবার ভাবছি যত ছোটোই হোক না কেন, ওটা তো ওর সিদ্ধান্ত ছিলো। আমরা সেটা
নিয়ে আর কাটা-ছেঁড়া না করলেও তো পারি...
No comments:
Post a Comment